আহমেমদ কবীর সিকদার, কুতুবদিয়া::
কক্সবাজারের দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার কয়েকটি ইউনিয়নে নলকূপে খাবারের পানীর তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় পুকুর,খাল ও জলাশয়গুলো শুকিয়ে গেছে। ফলে দেখা দিয়েছে পানির সংকট।দ্বীপের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নস্থ জনপদের অধিকাংশ গ্রামবাসীকে এখন দূর-দূরান্তের নলকূপ থেকে খাবারের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
জানা যায়, শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধান চাষে গভীর নলকূপ থেকে প্রেশার মেশিনের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করার কারণে উপজেলার উত্তর ধূরুং,দক্ষিণ ধূরুং,লেমশীখালী,কৈয়ারবিলসহ বড়ঘোপ ইউনিয়নের প্রায় এলাকার হস্তচালিত টিউবওয়েল থেকে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। বিশেষ করে উত্তর ধূরুং,দক্ষিণ ধূরুং ও লেমশীখালী ইউনিয়নস্থ ভিবিন্ন এলাকায় এ সমস্যা বেশি দেখা দিচ্ছে। বিগত বর্ষা মৌসুমে জরাজীর্ন বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়েছিল বৃহত্তর পুরো উত্তর ধূরুং ইউনিয়ন।যার ফলে সেখানকার প্রতিটা বসত ভিটির পুকুর লবণাক্ত পানিতে ভরাট হয়েছিল।নিরুপায় হয়ে পুকুর/খাল থেকে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করার কারণে প্রতিদিন পানিবাহিত ভিবিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শতশত মানুষ। কিছু কিছু পুকুরে সামান্য মিঠা পানি থাকলেও শুকিয়ে যাওয়ার কারণে তা ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
গত (০৭/০৫/২০২১)শুক্রবার উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রান্তরে ঘুরে এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এবং শুষ্ক মৌসুমে গভীর নলকূপে প্রেশার মেশিন বসিয়ে ধান চাষের জন্য দিন রাত সারাক্ষণ পানি উত্তোলন করায় অসংখ্য হস্তচালিত নলকূপে পানির দেখা মিলছে না। অকেজো হয়ে পড়েছে শতশত নলকূপ। ফলে বিভিন্ন গ্রামে দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাওয়ায় খাওয়ার পানির সঙ্গে দৈনন্দিন ব্যবহারের পানিরও অভাব দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো গ্রামের একটি নলকূপে পানি ওঠার সংবাদ পেলে ওই গ্রামসহ পানিসংকটে থাকা আশপাশের গ্রামবাসী সেথায় গিয়ে নলকূপে ভিড় করে।তবে কোনো কোনো গ্রামে কেউ কেউ আবার বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে ইঞ্চিন চালিত মেশিনে পাম্পসহ পাইপ বসিয়ে কোনো রকম খাবার পানি সংগ্রহ করছেন। সেখানেও লাইন ধরে পানি নিতে হচ্ছে।বৈশ্বিক মহামারি এই করোনার ভয়াবহ পরিস্থিতিতে এভাবে পানি সংগ্রহ করা অনেকটাই ঝুঁকিপূর্ণ।
উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের বাসিন্দা নাজের হোছাইন বলেন, প্রতিবছর ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত এই ইউনিয়ন সহ কুতুবদিয়ার কয়েকটি ইউনিয়নে খাবারের পানির তীব্র সংকট থাকে।আমাদের ইউনিয়নে প্রায় ১৬০টির অধিক নলকূপ থেকে বিগত দুই মাস যাবৎ পানি উঠছে না।এই ইউনিয়নে প্রায় ৩০হাজার মানুষের বসবাস।বর্ষায় বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে সাগরের পানির ডুকার কারনে এই ইউনিয়নের প্রায় পুকুর লবণাক্ত পানিতে ভরপুর।যার কারণে পুকুরের পানি গুলো লবণাক্ত হওয়ার কারণে ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পবিত্র এ-মাহে রমজানে গ্রামের বেশ কয়েকটি মসজিদে নামায আদায় করতে যাওয়া মুসল্লি ওজু করার জন্য পানি পাচ্ছেন না।যার কারনে নলকূপে পাম্প বসিয়ে পানি উত্তোলন করে ওজুতে ব্যবহার করা হচ্ছে।এখানে শতশত নলকূপ থাকলেও চলতি শুষ্ক মৌসুমে পানি উত্তোলন না হওয়ায় তীব্র পানি সংকটে ভুগছে এখানকার লোকজন।
একই ইউনিয়নের বাসিন্দা রেহেনা বেগম জানান, ঘরের সব কাজ শেষে বিকেলে রান্না বান্না কাজে ব্যবহারের জন্য পানি সংগ্রহে বের হন তিনি। দু’তিন কলসি পানি দিয়েই বাড়ির সব কাজ সেরে নিতে হয় তাকে । দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে তিনি বলেন কোমরে বহন করে মাত্র দু’তিন কলসি পানি সংগ্রহ করতে বাড়ির অদূরে গিয়ে তাকে ২-৩ ঘণ্টারও বেশি সময় ব্যয় করতে হয়।
লেমশীখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আজিজুল হক বলেন,লেমশীখালীর বিভিন্ন এলাকাবাসী অনেক দিন ধরেই বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে। সরকারি উদ্যোগে এসব এলাকায় ডিপ টিউবওয়েল’ স্থাপন করা হলে পানির সংকট থেকে হাজার হাজার মানুষ মুক্তি পেত বলে মন্তব্য করেন তিনি।
লেমশীখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা মিজান টেম্পো গাড়ি নিয়ে বড়ঘোপ ইউনিয়ন এর কলেজ রোড় এলাকায় পানি নিতে আসলে তার সাথে আমার এক প্রকার কথা হয় সেই বলে আমরা বড়ঘোপ থেকে প্রতি জারিক্যান ২টাকা করে ভর্তি করে লেমশীখালীতে ২০টাকা করে বিক্রি করি প্রতিদিন আমরা ১০০-১৫০জারিক্যান পানি বড়ঘোপ থেকে সংগ্রহ করি।
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মোঃ মুনিরুজ্জামান দেওয়ানজি’র নিকট জানতে চাইলে মুঠোফোন রিসিব না করাতে বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
পাঠকের মতামত: